রুপসীবাংলা৭১ তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : চাঁদ এখন আর কেবল কবিতা, সাহিত্য, কল্প কাহিনী কিংবা টেলিস্কোপে দেখার বস্তু নয় বরং মানুষের পরবর্তী বড় গন্তব্য হতে যাচ্ছে। তবে এই মহাকাশ অভিযানের জোয়ারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে একটি বড় দুশ্চিন্তা, আর তা হলো মহাকাশ বর্জ্য বা মৃত স্যাটেলাইট ব্যবস্থাপনা।
আগামী দুই দশকে চাঁদে প্রায় চারশোর বেশি মিশনের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে নাসা-র লুনার গেটওয়ে মহাকাশ স্টেশন এবং চীন-রাশিয়ার যৌথ চন্দ্রঘাঁটি অন্যতম।
পৃথিবীর ক্ষেত্রে মৃত স্যাটেলাইটগুলো বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় ঘর্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, কিন্তু চাঁদে বায়ুমণ্ডল না থাকায় এই সহজ সমাধানটি সেখানে কাজ করবে না। এই জটিল সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।
সম্প্রতি লন্ডনের বার্কবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থাগুলো সতর্কবার্তা দিয়েছে, সময় থাকতে একটি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা বা ইএসএ আগামী বছর ‘লুনার পাথফাইন্ডার’ নামে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ তাদের ‘মুনলাইট’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে কাজ করবে। তবে আট বছর পর এর মেয়াদ শেষ হলে সেটি কোথায় ফেলা হবে, তা নিয়ে এখন থেকেই গবেষণা চলছে।
মূলত তিনটি উপায়ের কথা ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা, হয় জ্বালানি ব্যবহার করে সেটিকে সূর্যের কক্ষপথে পাঠিয়ে দেওয়া, নয়তো চাঁদের কোনো দূরবর্তী কক্ষপথে রাখা, অথবা সরাসরি চাঁদের বুকে আছড়ে ফেলা। তবে চাঁদের অসম মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে কক্ষপথে রাখা যেমন কঠিন, তেমনি সূর্যের কাছে পাঠানোও অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান হিসেবে উঠে আসছে চন্দ্র সমাধিস্থল বা গ্রেভইয়ার্ড জোন তৈরির ধারণা। ব্রিটিশ স্পেস এজেন্সি এবং আর্টেমিস অ্যাকর্ডসের সদস্য দেশগুলো নির্দিষ্ট কিছু এলাকা বা বড় গর্তকে চিহ্নিত করার কথা ভাবছে, যেখানে মৃত স্যাটেলাইটগুলোকে নিয়ন্ত্রিতভাবে আছড়ে ফেলা হবে।
এতে করে চাঁদের অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো রক্ষা পাবে এবং ধুলোবালিও নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। সার্কারি স্যাটেলাইট টেকনোলজি লিমিটেডের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে মহাকাশ বর্জ্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে না। অন্যদিকে ওপেন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই মৃত স্যাটেলাইট আছড়ে পড়ার ঘটনাটি রিভার্স সায়েন্স হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। কারণ নির্দিষ্ট ভরের কোনো বস্তু নির্দিষ্ট গতিতে কোথায় আছড়ে পড়ছে তা জানা থাকলে, সেই কম্পন বিশ্লেষণ করে চাঁদের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে নতুন সব তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
রুপসীবাংলা৭১/এআর

