নিজস্ব প্রতিনিধি :তাঁরা জানালেন আমাদের তৈরি পোষাক শিল্পকে শক্তিশালী করার পেছনে স্পিনিং সেক্টরের অবদান অপরিসীম। কাঁচা তুলা থেকে সুতা উৎপাদন, দক্ষ শ্রমশক্তির ব্যবহার, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগীতা সব মিলিয়ে এই শিল্প আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সেবীরের সাথে প্রায় কয়েক লক্ষ লোক জড়িত।
কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই শিয়ের উপর দিয়ে নানান ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, জ্বালানী সংকট আর এ সকল কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগীতা এসব চ্যালেঞ্জের কারনে বর্তমানে স্পিনিং শিল্প খুবই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি।
ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ শিল্প কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বাকি শিল্প কারখানাসমূহ ক্রমান্বয়ে বন্ধ হওয়ার পথে। এমতাবস্থায় এই শিল্পকে বাচাতে, এর সাথে জড়িত লক্ষ লক্ষ কর্মজীবী মানুষের চাকুরী রক্ষার্থে এবং সামগ্রীক অর্থনীতির ধস ঠেকাতে আমাদের নিম্ন-লিখিত প্রস্তাবনাসমূহ অতি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আনুল আবেদন জানাচ্ছি।
প্রস্তাবনাসমূহ:
০১. গামেন্টস সেক্টরে ৫% প্রণোদনা বিদ্যমান ছিল কিন্তু বিগত সরকার এর শেষ সময়ে হঠাৎ করে ৫% থেকে ১.৫% এ নিয়ে আসে। ফলে গামেন্টস এর উপর ব্যাপক প্রভাব পরে এবং এর সাথে সাথে দেশে উৎপাদিত সুতা শিল্প (স্পিনিং সেক্টর) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই গামেন্টস এর এক্সপোর্টের উপর দেশীয় সুতা ব্যবহারকারীদের জন্য ১০০% প্রনোদনা দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি এবং সুতা আমদানির ক্ষেত্রে ১০% সেইফ গার্ড ডিউটি প্রয়োগ করার দাবী জানাচ্ছি।
০২. বিগত সরকার কর্তৃক পর পর ৩ ধাপে ৩৫০% গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি করে, ফলে টেক্সটাইল সেক্টরের পন্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় তবে উক্ত টেক্সটাইল সেক্টরের উৎপাদিত পন্যের বিক্রয় মূল্য কোন ভাবেই সমন্বয় করা হয় নাই। এতে করে স্পিনিং সেক্টরসহ সকল ব্যাকওয়ার্ড শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে। তাই রপ্তানীকৃত পন্যের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল থেকে ৩০% রিবেট দিয়ে আপদকালীন সময় (দুই বছরের জন্য) প্রনোদনা দিতে হবে। প্রতিযোগী দেশ গুলো এই ধরনের সুযোগ দিয়ে আসছে।
০৩. সূতা আমদানীর ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি যে, সূত্য রপ্তানীকৃত দেশ সমূহের সরকারের প্রনোদনার কারনে আমাদের দেশের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে তারা সূতা রপ্তানী করছে। এ ক্ষেত্রে বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের নিদিষ্ট মনিটরিং এর মাধ্যমে এন্টি ড্যাম্পিং ট্যাক্স/সেইফ গার্ড ডিউটি প্রয়োগ করতে জোর দাবী জানাচ্ছি। যেমন আমাদের দেশের পাট পন্যের উপর অন্য দেশ কর্তৃক প্রয়োগ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্য নিরাপত্তা কমিটি কেবিপিআই কটিন ইয়ান/স্পিনিং ইয়ার্ন আমবানির অপর নিম্ন বিথিরুভাবে সেইফ গার্ড শুল্ক আরোপ করেছে।

ক. মোট ২৭ টি এইচএস কোডের ইয়ার্ন এই গুপ্তের আওতায় এসেছে।
খ. শুল্ক কার্যকর থাকবে ৩ বছর।
গ. ৩০ অক্টোবর-২০২৫ইং থেকে ২৬ অক্টোবর-২০২৮ইং পর্যন্ত।
প্রতি কেজি সুতা আমদানির উপর নিম্ন লিখিত হারে শুস্ক আরোপ করেছে।।
ক. প্রথম বছর (২০২৫-২০২৯)। প্রতি কেজিতে ৪৫ সেন্টস
খ. দ্বিতীয় বছর (২০২৬-২০-২৭)। প্রতি কেজিতে ৪৪ সেন্টস
গ. তৃতীয় বছর (২০২৭-২০২৮): প্রতি কেজিতে ৪৩ সেন্টস
০৪. বাংলাদেশ ব্যাংক এর রিজার্ভ থেকে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাষ্ট্রি এবং গামেন্টস ফ্যাক্টরী গুলোকে সহযোগীতা করার জন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের মত ইডিএফ ফান্ড বরাদ্দ ছিল। যা কোন ফ্যাক্টরীর এক বছরের ইমপোর্ট অথবা ৩০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে যেটি বেশী তার সমপরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হত। বর্তমান আপদকালীন সময় থেকে উত্তরণের জন্য আগামী দুই বছরের জন্য উপরোক্ত সুবিধা পুনর্বহাল করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
৩৫. এক্সপোর্ট পণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের ৭০% কাঁচামাল স্থানীয় উৎস থেকে খরচ করার জন্য দাবী জানাচ্ছি।
০৬. পণ্য বহুমুখীকরন (রিসাইকেল এবং সাসটেইনেবল প্রডাক্ট) ও উক্ত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে রিসাইকেল এবং সাসটেইনেবল পন্যের উপর অতিরিক্ত ৫% (উপরোক্ত ১০% এর বাইরে) প্রনোদনা দেওয়ার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি এবং উল্লেখিত পণ্য উৎপাদনের জন্য স্পিনিং মিলের মেশিনারীজ গুলোকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করার জন্য ৫% ইন্টারেস্ট ১০ বছর মেয়াদী বিশেষ প্যাকেজের ঋন সহায়তা প্রদানের দাবী জানাচ্ছি।
০৭. বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার জন্য প্রায় ৪০ ভাগ কাঁচামাল আমদানীর সক্ষমতা কমে গিয়েছে। ফলে বর্তমানে কারখানাগুলোতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্যাপাসিটিতে চলছে। তাই পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদন সক্ষমতা ফিরিয়ে নিতে আমদানীর ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
পরিশেষে উপরোক্ত বিষয়সমূহের গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশের রপ্তানী খাতের সাথে সম্পৃক্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্পিনিং সেক্টরের চলমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে অতি দ্রুত উত্তোরণের জন্য এই সেক্টরের সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবী জানানো যাচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি সরকার অবশ্যই এই বিষয়ে আন্তরিক হবেন এবং সমস্যা নিরসনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

