নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ২৩ মার্চ ঐতিহাসিক পতাকা দিবস উপলক্ষে আজ ২৩ মার্চ ২০২৪ শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে সংস্কৃতি চর্চা প্রতিষ্ঠান উঠোন-এর পক্ষ থেকে “একটি পতাকার জন্য” শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক, গবেষক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গিয়াস, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সভাপতিত্ব করেন অলক দাশগুপ্ত। সূচনা বক্তব্য রাখেন উঠোন-এর সাধারণ সম্পাদক অনিকেত রাজেশ।
সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে উপস্থিত হাজার হাজার উচ্ছ্বসিত উদ্দীপ্ত জনতার সামনে নিজ হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ২৩শে মার্চের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।
প্রথমেই জাতীয় সংগীতের সাথে অতিথিদের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সকাল ১০.৩০টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গোলাম কুদ্দুছ আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেনÑ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ২৩শে মার্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ২৩শে মার্চ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে সমগ্র বাংলাদেশে কেবলমাত্র প্রেসিডেন্ট হাউস ও ক্যান্টনমেন্ট ব্যতীত হাইকোর্ট, সচিবালয়সহ সমস্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বাসাবাড়িতে, যানবাহনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিছু বিদেশী দূতাবাস সকালে পাকিস্তানের পতাকা উড়ালে পরে সেটি নামিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে।
তিনি বলেন, ৩ রা মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ও মহাকাব্যিক ভাষণ এবং ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে প্রতিরোধ দিবসের ডাক দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনÑ প্রতিটি ঘটনার যে ধারাবাহিকতাÑ এবং একইসাথে বাঙালি জাতিকে একটি ঐক্যের মোহনায় নিয়ে আসা, এ সবই এক মহানায়কের অবিস্মরণীয় ও বিস্ময়কর নেতৃত্বের ফসল।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ২৩শে মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পল্টন ময়দানে সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে এবং এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ছাত্রলীগের জয়বাংলা বাহিনীর গার্ড অব অনার গ্রহণ করে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সেই পতাকাটি বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন। ২৩শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। দিনটি এর আগে পাকিস্তান হিসেবে পালিত হতো। কিন্তু এর কয়েকদিন আগে, সম্ভবত ১৭ মার্চ দিনটিকে প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের জন্য বঙ্গবন্ধু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দেন। ২২শে মার্চের সকল পত্রিকায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার মাপ ও ডিজাইন কী হবেÑ সে সম্পর্কে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশনা ছাপা হয়।
আলোচক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেনÑ ১৯৭১ এর মার্চে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যকে তাদের মুখে তুলে ধরত। সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতার কারণে যা তিনি বলতে পারতেন না, তাই ছাত্রলীগ নেতৃত্ব বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করত। বঙ্গবন্ধু তাঁর নানামুখি কৌশলী নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতিকে জাগরণী মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করেছেন এবং স্বাধীনতার চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা প্রতিষ্ঠান উঠোন ও সুরতাল-এর শিল্পীগণ দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে শব্দবৃত্তি। একক সংগীত পরিবেশন করেন আরিফ রহমান, শিল্পী সাহা, মারুফ হোসেন, আসিফ ইকবাল সৌরভ ও লিটু মণ্ডল। ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু, জয়ন্ত রায়, আনিসা জামান চাঁপা, আহসানউল্লাহ তমাল, মাহফুজা আক্তার মিরা ও সুমনা সুমি একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আনিসুর রহমান রিমন।