রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা : আনআম, আয়াত : ৪৮-৪৯
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
وَ مَا نُرۡسِلُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ اِلَّا مُبَشِّرِیۡنَ وَ مُنۡذِرِیۡنَ ۚ فَمَنۡ اٰمَنَ وَ اَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۴۸﴾
وَ الَّذِیۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَمَسُّهُمُ الۡعَذَابُ بِمَا كَانُوۡا یَفۡسُقُوۡنَ ﴿۴۹﴾
সরল অনুবাদ
(৪৮) আর আমি রাসুলগণকে তো শুধু সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি। অতঃপর যারা ঈমান আনবে ও নিজেকে সংশোধন করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
(৪৯) যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করে, সত্য-ত্যাগের জন্য তাদের ওপর শাস্তি আপতিত হবে।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা আনআমের ৪৮ নম্বর আয়াতে “রাসুলগণকে তো শুধু সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি” এই কথার দ্বারা মহান আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, প্রেরিত রাসুলগণের প্রধান কাজ ছিল দুইটি— (এক) বাশীর (بشير): ঈমান ও সৎকর্ম করলে জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির সুসংবাদ দেওয়া।
(২) নাযীর (نذير): অবিশ্বাস, পাপাচার ও জুলুম করলে আখিরাতের শাস্তির বিষয়ে সতর্ক করা। অর্থাৎ, রাসুলদের দায়িত্ব মানুষের হাতে জোরপূর্বক ঈমান চাপিয়ে দেওয়া নয়; বরং সত্যকে পৌঁছে দেওয়া, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে সঠিক পথ বেছে নিতে পারে।
আয়াতের অংশ “সুতরাং যে বিশ্বাস করবে ও নিজেকে সংশোধন করবে” এখানে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছে— (১) ঈমান আনা (آمنوا): আল্লাহ্র একত্ব, নবী ও আখিরাতকে মানা। (২) নিজেকে সংশোধন করা (أصلحوا): ঈমান আনার পর জীবনকে আমলের মাধ্যমে পরিবর্তন করা, অন্যায় থেকে বিরত থাকা, সৎকর্মে অভ্যস্ত হওয়া।
শুধু মুখে ঈমান আনলেই চলবে না; এর সাথে বাস্তব জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে।
আয়াতের অংশ “তার কোনো ভয় নেই এবং সে দুঃখিতও হবে না” এ অংশে মুমিনদের জন্য দুই ধরনের নিরাপত্তা ঘোষণা করা হয়েছে— (১) ভবিষ্যতের ভয় থেকে মুক্তি (لا خوف عليهم): জান্নাতের প্রতিশ্রুতির কারণে আখিরাতের অনিশ্চয়তা ও শাস্তির ভীতি থাকবে না। (২) অতীতের দুঃখ থেকে মুক্তি (ولا هم يحزنون): দুনিয়ার ব্যর্থতা, হারানো বা দুনিয়ার জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কোনো বেদনা আখিরাতে তাদের কষ্ট দিবে না। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে এই আশ্বাস এসেছে— إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ “যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, তারপর সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে—তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
” (সুরা আল-আহকাফ আয়াত ১৩)
সুরা আনআমের ৪৯ নম্বর আয়াতে كذَّبُوا بِآيَاتِنَا “আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলা” এখানে কেবল কাগজি অস্বীকৃতি নয়, বরং কিয়ামতের নিদর্শন, আল্লাহর নিদর্শনের প্রমাণ ও নবীদের বাণীকে উপহাস করা এবং সরাসরি অস্বীকার করার অবস্থা বোঝানো হয়েছে।
এই আয়াতটিতে মহান আল্লাহ তাআলা কাফির ও মুশরিকদের কিয়ামত, পরকালের প্রতিদান, নবীর উপদেশ ইত্যাদি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপের কঠিনতর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আল্লাহ যে নিদর্শন দেখিয়েছেন তা নিয়ে উপহাস বা অবজ্ঞা করলে শুধু তাৎক্ষণিক সামাজিক লাঞ্ছনা নয়; আখিরাতেও শাস্তি অপেক্ষা করছে। এটাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, এই শাস্তি সরাসরি তাদের কাজের প্রতিদান।
রুপসীবাংলা৭১/এআর

