নিজস্ব প্রতিনিধি:-বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রম আইন লংঘনের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ (রেজিঃ নং—বি—২১৪৭) বুড়িমারী শাখা কমিটি। শ্রম আইন বিরোধী সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে বুড়িমারীতে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয় এবং দেখা দেয় চরম অসন্তোষ। সাধারণ শ্রমিকরা কাজ করে নিয়মিত মজুরি পেয়ে আসছেন। কিন্তু বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ শ্রম আইন এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র লংঘন করে বুড়িমারীতে শাখা কমিটি গঠন করে সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করে আসছে। ১২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সকালে বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখা অবৈধ ভাবে কাজের সিরিয়াল দেয়ার চেষ্টা করলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের নিবন্ধিত ৩টি শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখা নেতৃবৃন্দ বাইরে থেকে সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সাধারণ শ্রমিকদের উপর হামলা করে। হামলায় প্রায় ১৫ জন সাধারণ শ্রমিক আহত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দুপুর ১২ টায় পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (বি—সার্কেল) ফরহাদ ইমরুল কায়েস, পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দুই পক্ষের বৈঠকের আশ্বাস দেন। কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠকে বসতে রাজি নয়। যেকোন মূল্যে বুড়িমারী স্থলে বন্দরে তারা শ্রম আইন বিরোধী অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়।
ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গেলে বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখার সন্ত্রাসীরা এশিয়ান টিভির পাটগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি এম এ কামাল এবং দৈনিক কালবেলার পাটগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি মিঠু মুরাদের উপর হামলা করে। এ ঘটনায় বুড়িমারী স্থলবন্দরের নিবন্ধিত ৩টি ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন।সাধারণ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিকদের মাঝে সংঘাত সৃষ্টি করে একটি চত্রু কাজ না করেও মজুরি চেয়ে আসছেন। বুড়িমারী স্থলবন্দরের যে সমস্ত মালামাল বা পণ্য শ্রমিক দ্বারা লোড দেওয়া সম্ভব নয় সেই মালামাল বা পণ্য মেশিন দ্বারা ট্রাকে লোড দেওয়া হয় এবং সেই পণ্য লোড এর মজুরি মেশিন মালিককে প্রদান করা হয়। মেশিন মালিককে মজুরি প্রদানের পর যে অবশিষ্ট টাকা থাকে তা সাধারণ শ্রমিকদের ভাগ করে দেওয়া হয় কিন্তু বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখা কমিটির নেতারা সাধারণ শ্রমিকদের মিথ্যা তথ্য প্রচার করে হিসাবের চাইতেও বেশি টাকা দাবি করে অথচ মেশিনদ্বারা লোডের কাজের মজুরি মেশিন মালিককে দেওয়ার পর অবশিষ্ট টাকা সাধারণ শ্রমিক কখনোই দাবি করতে পারেনা কারণ তারা যে কাজ করে তার মজুরি পেয়ে আসছেন মেশিন মালিক ব্যতিত অন্য কেউ তথা শ্রমিকরা যে কাজ করেনি সেই কাজের মজুরি চাওয়া সম্পূর্ন বেআইনি। বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন সরদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আজাদ হোসেন কর্তৃক শ্রম আইন ও তার সংগঠনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে গত ১০ মে ২০২৩ইং তারিখে মো. সাজ্জাদ হোসেন কে সভাপতি ও মো. আনোয়ার হোসেন কে সাধারণ সম্পাদক করে প্রদানকৃত বুড়িমারী শাখা কমিটি শ্রম আইন ও তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রণয়নের কোন বিধান নেই বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখা কমিটিকে কেন্দ্র করে দেশের ২য় বৃহত্তম স্থলবন্দর বুড়িমারীতে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট ২০২৩ সাংবাদিক বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ গঠনতন্ত্র ও শ্রম আইন অনুযায়ী বুড়িমারী শাখা কমিটি দিতে পারে কি না এ বিষয়ে তথ্য প্রাপ্তির ‘ক’ ফরমে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন। তারই প্রেক্ষিতে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল আজিম স্বাক্ষরিত পত্রে জানান “বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ (রেজিঃ নং—বি—২১৪৭) এর বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে শাখা কমিটি প্রণয়নের বিষয়ে কোন বিধান নেই” মর্মে জানান। স্বাভাবিক কারণেই বলা যায় বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখা অবৈধ।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দর লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলাস্থ বুড়িমারী ইউনিয়নে অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দর। বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শ্রম দপ্তর কতৃর্ক তিনটি শ্রমিক ইউনিয়ন (১) বুড়িমারী স্থলবন্দর ও স্টেশন কুলি শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং রাজ—১৪৩৮, (২) বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং—রং—০২ ও (৩) বুড়িমারী স্থলবন্দর লোড আনলোড লেবার ইউনিয়ন রেজিঃ নং—রং—০৩ নিবন্ধন প্রাপ্ত হওয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ৪২নং আইনের ২০২(২) ধারা অনুযায়ী বুড়িমারী স্থলবন্দরের শ্রমিকদের যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। শ্রম আইন অনুযায়ী বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিকদের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ট্রেড ইউনিয়ন’ই স্থানীয় প্রতিনিধিত্বকারী। বুড়িমারী স্থল বন্দরের কোন শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ এর কোন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন বা জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন এর অন্তর্ভুক্ত নয়। শ্রম আইনের ২০৩ (২) ধারা অনুযায়ী কোন ফেডারেশন কেবলমাত্র সেই প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করিবে, যে প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে উহার কোন সদস্য ট্রেড ইউনিয়ন যৌথ দরকষাকষি হিসাবে আছে। শ্রম আইন মতে নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া কোন ব্যক্তি কখনোই কোন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সদস্য হতে পারে না। যেহেতু বুড়িমারী স্থলবন্দরের কোন ট্রেড ইউনিয়ন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত বা সদস্য নয় তাই স্বাভাবিক কারণে বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ শ্রম আইন মোতাবেক বুড়িমারী স্থলবন্দরে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারে না।
জানা যায়, বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী শাখা কমিটির কারণেই সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রম আইন লংঘন করে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রভাব বিস্তার করতে দীর্ঘদিন যাবত প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাই অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বুড়িমারীর সাধারণ শ্রমিকরা।