শেখ আবুল বাশার: একজন দায়িত্বশীল ও মানবিক পুলিশের গল্প

0
42

বাপ্পি এদবরঃ

ঢাকার সেগুনবাগিচায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল সকাল গেলে দেখা মিলবে পরিচিত একটি মুখ। কোনো দিন সকাল নয়টায়, কোনো দিন আরো আগে, আটটা নাগাদ হাজির থাকেন তিনি। পরনে পুলিশের ইউনিফর্ম। কখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন, কখনোবা ঘুরেঘুরে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করছেন। চারপাশে নজর তাঁর। কে যাচ্ছেন, কে আসছেন, কে কি করছেন, বলছেন- আপনমনে এসব দেখছেন-শুনছেন তিনি। সচরাচর বসতে দেখা যায় না তাঁকে। যেন যেকোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সদা প্রস্তুত।

শেখ আবুল বাশার: একজন দায়িত্বশীল ও মানবিক পুলিশের গল্প

বলছি পুলিশ ইন্সপেক্টর শেখ আবুল বাশারের কথা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দীর্ঘদিন ধরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে গণতন্ত্র, মানবতা এবং মানবাধিকারে বিশ্বাস রয়েছে এই সরকারি কর্মকর্তার। প্রতি দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নানান দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ লেগে থাকে। মিছিল-মিটিং এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। বিভিন্ন সময় নানান ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসে প্রেসক্লাবের সামনের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে। এসব কিছুই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন আবুল বাশার। পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখা, নিয়ন্ত্রণে রাখা তাঁর প্রধান দায়িত্ব।মনে করি, পুলিশ ধরপাকড় করে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে। তবে আবুল বাশার এই ধারণাটি বদলে দিয়েছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দীর্ঘদিন অনশন করেছেন আরেকজন বিশেষভাবে সক্ষম নারী চাঁদের কনা। তিনি আবুল বাশারের মানবিক আচরণ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। বাশারের উদ্দেশে এই নারী লিখেছেন, ‌‌‍’আমি হয়তো বেশিকিছু করতে পারবো না, তবে আপনার জন্য দোয়া করতে পারি। এবং আপনাকে দেওয়ার জন্য দোয়ার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। ভালো থাকবেন, দীর্ঘায়ু লাভ করুন শেখ আবুল বাশার।’

আরেকটি ঘটনার কথা না বললেই নয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল পুরো এলাকাটি। পুলিশ ছিল প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ। শিক্ষার্থী ছিল ৪০ থেকে ৫০ জন। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের উপর চড়াও হয়। চরম উত্তেজনার মধ্যে আবুল বাশার তাঁর অধস্তন পুলিশদের কঠোর হতে, শিক্ষার্থীদের পেটাতে মানা করে দেন। তাঁর এমন শান্ত এবং মানবিক আচরণ দেখে একপর্যায়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়ে যায়।

শেখ আবুল বাশার: একজন দায়িত্বশীল ও মানবিক পুলিশ

এই বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শাখাওয়াত বলেন, আমরা দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে আন্দোলন করছিলাম। এ সময় উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ আমাদের থামিয়ে দেয়। ইন্সপেক্টর আবুল বাশার অত্যন্ত প্রজ্ঞার সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামলে নেন। সংঘাতে যাননি তিনি। তাঁর নেতৃত্বে পুলিশ কারো গায়ে হাত তোলেনি।

শেখ আবুল বাশারের পেশাগত জীবনে এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে লকডাউনে সবাই ঘরবন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন। ঢাকার হোটেল-রেস্তোঁরাগুলো বন্ধ ছিল। সেই সময় পথের পশুরা খাবারের অভাবে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। আবুল বাশার খাবার নিয়ে ক্ষুধার্ত পশুদের জন্য পথে হাজির ছিলেন।

শেখ আবুল বাশার: একজন দায়িত্বশীল ও মানবিক পুলিশ

গোপালগঞ্জের কাঁথি গ্রামে শেখ আবুল বাশারের জন্ম, ১৯৬৪ সালে। তাঁর বাবা শেখ আবুল কাসেম পেশায় পুলিশ ছিলেন। বাবার পথ ধরেই তাঁর পুলিশের চাকরিতে যোগদান। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৯ সালে আবুল বাশার পুলিশের সার্জেন্ট পদে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে ইন্সপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। বর্তমানে আবুল বাশার ঢাকার রমনা ডিভিশনের অধীনে শাহবাগ থানায় পেট্রল পুলিশ ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত আছেন। খুবই সাধারণ জীবনযাপন তাঁর। আবুল বাশার সুশিক্ষিত, স্পষ্টভাষী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগের দায়িত্বশীল এবং মানবিকতাসম্পন্ন এক রত্ন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে