হিন্দু আইন পরিবর্তন চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত

0
296

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অদ্য ২ জুন, শুক্রবার শাহবাগ জাতীয় যাদুঘর চত্বরে হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদের আহ্বানে হিন্দু ধর্মীয় সামাজিক সংগঠন সমূহ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার ও ঢাকা বার এসোসিয়েশন এর হিন্দু আইনজীবীদের উদ্যোগে হিন্দু আইন পরিবর্তন চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ড. জে. কে পাল মহোদয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় উত্তম কুমার দাস ও সুমন কুমার রায়।


উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সনাতন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক  হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ইসকন বাংলাদেশ এর ফুড ফর প্রোগ্রাম পরিচালক শ্রীমৎ রুপানুগ গৌরদাস ব্রাহ্মচারী, শ্রীমৎ চিন্ময় গদধর দাস ব্রহ্মচারী, অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মন্ডল, হিন্দু ল ইয়ার্স অর্গানাইজেশন এর সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট শংকর চন্দ্র দাস,এড. জগদীশ বৈদ্য, এডভোকেট দীপ্তিষ হালদার, অ্যাডভোকেট সুব্রত বিশ্বাস, এডভোকেট জিতেন্দ্র চন্দ্র বর্মন, এডভোকেট উজ্জ্বল প্রসাদ, এডভোকেট শ্রী প্রহল্লাদ সাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেখা রানীগুন, দীপঙ্কর সিকদার দীপু , ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল কুমার রায়, সাগর শ্রী বিজয় ভট্টাচার্য, পলাশ কান্তি দে, ডাক্তার এম কে রায় ,  এডভোকেট সঞ্জয় কুমার দে দুর্জয়, শ্যামল কান্তি নাগ (সাংবাদিক), শ্রী সাধন দেবনাথ, শ্রী সাজন মিস্ত্র, শ্রী শংকর সরকার, শ্রী নিত্যগোপাল ঘোষ, নিহার হালদার, শ্রী দিপংকর বেপারী, প্রদীপ কান্তি দে, শ্যামল দাস, কৃষ্ণ দাস, পিষুজ দাস, আকাশ শীল, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল মধু, অনিল পাল, সাগর কর্মকার সহ হিন্দু ধর্মীয় সামাজিক সংগঠনের প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।এডভোকেট ড. জে. কে পাল মহোদয় বলেন, কোন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর পারিবারিক আইন বা পার্সনাল “ল” সরকার বা রাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন করতে পারেনা। কেননা পার্সনাল “ল” ধর্মীয় এবং শাস্ত্রীয় বিধি-বিধান এর আলোকে প্রণীত বিধায় এর পরিবর্তন বা পরিবর্তনের  উদ্যোগ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের সামিল। এতদসত্ত্বেও হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ ও তাদের সহযোগী গুটি কয়েক এনজিও এবং ধর্মান্তিরিত ও বিতর্কিত কিছু ব্যক্তি হিন্দু আইন পরিবর্তনের জন্য মরিয়া হয়ে প্রকারান্তরে হিন্দু ধর্মকে অবমাননা করে চলছে। যার প্রতিবাদে দেশের শান্তিপ্রিয় হিন্দু সম্প্রদায় আজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছে।
অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, আজকের এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আমরা হিন্দু আইন পরিবর্তন করা থেকে রাষ্ট্র এবং সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা সনাতন ধর্মীয় সামাজিক সংগঠন, ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন, গৌড়ীয় মঠ, প্রণব মঠ এর ধর্মীয় সাধুসন্তুগণ এবং সুপ্রিমকোর্ট ও ঢাকা বার এর হিন্দু আইনজীবীগণ সম্মিলিতভাবে হিন্দু আইন পরিবর্তন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। যার প্রেক্ষিতে মাননীয় আইনমন্ত্রী একাধিকবার আমাদের সাথে বৈঠকে হিন্দু আইন পরিবর্তন করা হবেনা বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। আশাকরি তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।


মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, হিন্দনারী ও পরিবারগুলির সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন অন্যঅন্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর তুলনায় এখনো অনেকটাই নিরাপদ। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের পারিবারিক এই নিরাপদের জায়গাটিকে স্বর্থান্বেষী মহলটি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।সাজন কুমার মিশ্র বলেন, আমরা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি যে, গুটিকয়েক নারীবাদী সংগঠন বিদেশী অর্থের প্রলোভনে হিন্দু নারীদের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠার নামে হিন্দু আইন পরিবর্তন এর চক্রান্তে সরকারের পৃষ্ঠপোষকদের সাথে গাট বেধে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তপ্রায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অবশিষ্ট অস্তিত্বটুকু বিলীন করার গভীর নীলনকশায় লিপ্ত হয়েছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে ডাক্তার এম কে রয় বলেন বিচারহীনতার কারণে হিন্দুরা নির্যাতন পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে হিন্দু শূন্য করার লক্ষ্যে একদল নরপিশাস চক্রন্ত করে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে এই মঞ্চ থেকে ধিক্কার জানাচ্ছি। আমরা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে বদ্ধপরিকর ।

অ্যাডভোকেট সুব্রত বিশ্বাস বক্তব্যে দেশে হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন অপরিবর্তিত রেখে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়, সংখ্যালঘু কমিশন এবং সংখ্যালঘুর সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য জোর দাবি জানান।

পলাশ কান্তি দে বলেন, সনাতনী পারিবারিক আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করা হলে সারা বাংলাদেশে কঠোর আন্দোলন এবং প্রয়োজনে সংসদ ঘেরাওসহ হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এডভোকেট সুমন কুমার রায় বলেন, পারিবারিক আইন পরিবর্তনের চক্রান্ত যারা করবে তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করা হবে। সরকার বা আওয়ামী লীগ যদি হিন্দু আইন পরিবর্তন চক্রান্তে লিপ্ত হয় সনাতন সম্প্রদায় তাদেরকে তালাক দিবে। অতএব, শান্তিপ্রিয় সনাতনী সম্প্রদায়ের মতো বিভাজন সৃষ্টি করা ও সনাতনী সম্প্রদায়কে এদেশ থেকে বিতারণের নীল নকশা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। যদি সরকার কোন আইন প্রণয়ন করতে চায় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করার পরামর্শ দেন।

সমাবেশে সম্মিলিত সনাতন পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার দীপঙ্কর বেপারী বলেন দেশে প্রতিনিয়ত হিন্দু বাড়িতে আগুন মন্দির

ভাংচুর, নির্যাতন খুন ধর্ষণ হামলা মামলা লুট সনাতন সম্প্রদায়ের উপর বেশি প্রতিনিয়ত চালানো হচ্ছে। এর কোন বিচার হচ্ছে না।হিন্দু সমাজের প্রকৃ দাবি বাস্তবায়ন না করে উল্টো দেশকে হিন্দু শুন্য করার জন্য হিন্দু পারিবারিক আইন বাস্তবায়নের পায়তারা করছে। অন্যান্য বক্তাগণ সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে হিন্দু আইন পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা চক্রের মূলহোতা পুলক ঘটক ও তার সহযোগীদের দ্রুত গেফতারের দাবি জানিয়ে শাহবাগ যাদুঘর থেকে মশাল মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবে এসে সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবং এই চক্রান্ত বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে সারা বাংলাদেশে সনাতনী সম্প্রদায়কে নিয়ে প্রতিরোধের জন্য গণআন্দোলনের হুশিয়ারি দেন এবং প্রয়োজনে আগামী নির্বাচনে ভোট বর্জনের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে