নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কতিপয় এনজিও কর্তৃক হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রচেষ্টার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট সকাল ১০ টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানব বন্ধন ও ঝাড়ু–মিছিলের আয়োজন করে। একই সময় হিন্দুদের আরও বেশ কিছু প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে তারা কোনভাবে হিন্দু আইনের সংস্কার মেনে নিতে চায়না। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডঃ দীনবন্ধু রায়, অ্যাডঃ প্রদীপ কুমার পাল, প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অভয় কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক পন্ডিত সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী যুব বিষয়ক সম্পাদক কিশোর বর্মন, দপ্তর সম্পাদক কঙ্কন মৃধা, হিন্দু মহিলা মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট লাকী বাছাড়, নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপিকা বহ্নি শিখা দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সমাপিকা দাস, প্রণব মঠের অধ্যক্ষ স্বামী সঙ্গীতানন্দ মহারাজ, হিন্দু স্বেচ্ছোসেবক নির্বাহী সভাপতি মিল্টন বিশ্বাস, হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি গৌতম সরকার অপু, সাধারণ সম্পাদক মৃণাল কান্তি মধু, সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন সরকার, হিন্দু মহাজোট ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ঘোষ, ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সভাপতি সজীব কুন্ডু তপু, সাধারণ সম্পাদক রণি রাজবংশী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক গোপাল কুন্ডু,
প্রচার সম্পাদক বিধান সরকার অর্ঘ্য, সহ- প্রচার সম্পাদক নয়ন বৈরাগী, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শুভজিৎ বিশ্বাস, কার্যনির্বাহী সদস্য রাজীব হালদার, ছাত্র মহাজোট ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি বিশ্বজিৎ কুমার অপুর্ব, সাধারণ সম্পাদক সজীব দাস সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
বক্তাগণ বলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি এনজিও হাজার হাজার বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসা সুসংহত হিন্দু বিধি বিধান নষ্ট করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে দন্দ সংঘাত ও অশান্তির বীজ বপন করছে। তারা সুপ্রতিষ্ঠিত ও শান্তিপূর্ণ হিন্দু পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে হিন্দু শুন্য করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের দুরভিসন্ধি হাসিলে হিন্দু আইনের খসড়া তৈরী করে আইন কমিশনে জমা দিয়েছিল। সেখানে ব্যর্থ হয়ে এখন মহামান্য হইকোর্টে রীট দায়ের করেছে। যার নেতৃত্বে আছেন আইন ও শালিশ কেন্দ্র বেশ কয়েকটি এনজিও। তারা হিন্দু পারিবারিক সম্পত্তি বিভাজন করে ব্যক্তি কেন্দ্রীক সম্পত্তি বন্টন, বিবাহ বিচ্ছেদ, হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক ও শাস্তির বিধান, দত্তক, ভরন পোষনসহ বিভিন্ন বিষয়ে হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রীয় পবিত্র বিধি বিধান পরিবর্তনের চক্রান্ত করছে। তারা এটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভেদ ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দু সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এনজিওরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সেমিনার করে হিন্দু বিধিবিধান সম্পর্কে মিথ্যা, কাল্পনিক ও বিদ্বেষমুলক দিয়ে হিন্দু জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে হিন্দুদের প্রতিটি পরিবারে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘৃন্য অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। তথাকথিত সুশীল সমাজ ও এনজিওকর্মীরা হিন্দু আইনে তালাক ব্যবস্থা সংযুক্ত করার প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তারা হিন্দু বিবাহের মূল ভিত্তি নষ্ট করতে তৎপর। এনজিওদের চাপাচাপির কারনে সরকার অপসোনাল বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু করেছে। সেই রেজিস্ট্রেশনও হচ্ছে মুসলিম বিবাহ রেজিষ্টারে। মুসলিম বিবাহ রেজিষ্টারে রেজিষ্ট্রিকৃত খুলনার শ্রীবাস সাহা আবার সেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছে। অর্থাৎ বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দুুদের ঘাড়ে মুসলিম বিধি বিধান চাপিয়ে দিচ্ছে। অতএব তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ যে নামেই হোক না কেন কোনটাই হিন্দু সমাজ মেনে নেবে না।
বক্তাগণ আরো বলেন. সামান্য কিছু অনৈতিক ও বিকৃত রুচির এনজিও কর্মীর জন্য কোটি কোটি জনগণকে চরম ঝুকির মধ্যে ফেলতে দেয়া হবে না। গুটিকয়েক পাশ্চাত্য চিন্তা চেতনার অসুস্থ মস্তিষ্ক ও বিকৃত রুচির হৃদয়হীন নর নারীর কারনে লক্ষ লক্ষ নারী ও শিশুর জীবন বিপন্ন হতে দেওয়া যায় না। এনজিওদের কারনে দেশে আজ লক্ষ লক্ষ পথ শিশু। পৈত্রিক সম্পত্তি বিষয়ে হিন্দু বিধি বিধানে কোন বৈষম্য না থাকা সত্বেও তারা নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে হিন্দু সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। নারীরা পরিবারের বাইরে বিচ্ছন্ন কোন দ্বীপের অধিবাসী না। প্রত্যেক নারী কোন না কোন পরিবারের সদস্য। হিন্দুর নারীর শিক্ষাজীবন কাটে পিতার বাড়ীতে। কিন্তু সমগ্র জীবন স্থায়ীভাবে বাস করতে হয় স্বামীর বাড়ী তথা স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে নিজের বাড়ীতে। কোন নারী পিতার সম্পত্তি দাবী করলে তার ননদও তার স্বামীর সম্পত্তি টানাটানি করবে। ফলে নারীর স্থায়ী আবাস এর শান্তি ও স্থায়িত্ব নষ্ট হবে। এনজিওরা সেটাই চায়। তারা চায় উভয় পরিবারে কলহ, বিবাদ বিসম্বাদ, মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে নারীরা যাতে করে রাস্থায় পড়ে। সেটা নিয়ে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারন করতে চায়।
হিন্দু আইনের মূল ভিত্তি বেদ। বেদ ঈশ্বরের বাণী। হিন্দু বিবাহ, উত্তরাধিকার সহ সকল বিধি বিধান বেদ থেকে এসেছে। হিন্দু আইনের উপর হস্থক্ষেপ এর অর্থ সরাসরি হিন্দু ধর্মের উপর হস্থক্ষেপ; যা হিন্দু সমাজ কখনোই মেনে নেবে না। ঐশ্বরিক বিধিবিধানকে নষ্ট করতে দেয়া হবে না। যারা হিন্দু আইনকে নষ্ট করতে চায় হিন্দু সমাজ তাদেরকে কোন প্রকার ছাড় দেবে না। হিন্দু আইনে কোন হস্থক্ষেপ করা হবে মর্মে সরকারকে আগামী ৩০ মে মধ্যে স্পষ্ট ঘোষনার দাবী জানান। একই সংগে আইন ও শালিস কেন্দ্র, নারী পক্ষ, মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সহ যে সব এনজিও হিন্দু পরিবার, সমাজ ও ধর্ম বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে হিন্দু সমাজ ও পরিবারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবী জানান।