কীর্তিমানের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের কর্তব্য-ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণসভায় বক্তারা

0
53

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ স্বাধীনতা পরবর্তী একজন দূরদর্শী স্বাস্থ্য নেতা যিনি বিশ্বাস করতেন স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার তিনি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী (১৯৪১-২০২৩)। বিশিষ্ট এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তার অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “স্বাধীনতা পুরস্কার” অর্জন করেন। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তার অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ সালে রামন ম্যাগসেসে পুরস্কার এবং ১৯৯২ সালে রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ব্যতিক্রমী নির্মোহ এই মহান ব্যক্তি, গত ১১ এপ্রিল মঙ্গলবার ২০২৩ , ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে আজ ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ রবিবার “স্মরণে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী” শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্বা, তামাক নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদানকে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট বিনম্র শ্রদ্বার সাথে স্মরণ করছে। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে উক্ত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদ-ই মাহবুব, নারীপক্ষ’র সদস্য জাহান আরা খাতুন, উবিনিগের কর্মকর্তা সীমা দাস শিমু। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান। 

সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃষ্টান্তমূলক অগ্রপথিক ছিলেন ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে তিনি বীরঙ্গনা নারীদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা এবং হিজড়া ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি কিডনি রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করেন। বক্তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্যনীতি, ঔষধনীতি ও নারীশিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। আর্থিকভাবে দূর্বল ছেলে-মেয়েদের নিজ হাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে তিনি স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ১৯৮২ সালের বাংলাদেশ “জাতীয় ওষুধ নীতি” প্রণয়নে তিনি ছিলেন অন্যতম রূপকার। ঔষধ নীতি প্রণয়নের কারণে ১৫০ টি দেশে সুলভ মূল্যে ঔষধ রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হয়।

ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাহতদের জন্য গড়ে তোলেন বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল। চিকিৎসা ব্যবস্থায় “রেফারেন্স সিস্টেমের ” কথা বলেছেন তিনি যেখানে জুনিয়র চিকিৎসক হতে ধাপে ধাপে সিনিয়র চিকিৎসকের সেবা নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। যা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত ও আধুনিক করবে। প্রান্তিক ও চর এলাকার মানুষদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার কথা চিন্তা করে তিনি জাতীয় বাজেটে চরের মানুষদের জন্য অর্থ বরাদ্দের আহবান জানান।

ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদন ফর্মের একটি অন্যতম ও প্রথম শর্ত ছিল তাকে অধূমপায়ী হতে হবে। এর পাশাপাশি তামাক চাষ বন্ধে তার ভূমিকা তামাক নিয়ন্ত্রণে তার দৃঢ় অবস্থানকে নিশ্চিত করে। এছাড়া, তার প্রশংসনীয় উদ্যোগের ফলে মেডিকেলের সাধারণ ছাত্রদের যথাসময়ে পরীক্ষায় পাশ সংক্রান্ত জটিলতার অবসান ঘটে।

বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষ যে চিকিৎসা সেবা নিতে আর্থিকভাবে সক্ষম তিনি সেই চিকিৎসা সেবাই নিতে চেয়েছিলেন। এজন্য গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায়তেও তিনি বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এবং দেশেই তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

সভার সভাপতি বলেন, তিনি আজীবন একটি সুন্দর বাংলদেশের জন্য স্বপ্ন দেখে গেছেন। তিনি যেভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলেন আমাদেরকেও তার অসম্পন্ন কাজগুলো সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার  চিন্তা-চেতনা, আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করে সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে আসলেই তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শিত হবে ।

উক্ত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, নারী পক্ষের সদস্যসহ ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে