নিজস্ব প্রতিনিধি:কথাসাহিত্যিক শামসুন নাহারের ‘রক্তাক্ত মাগুরা: প্রেক্ষিত-মুক্তিযুদ্ধ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার বিকাল ৪.৩০ মিনিটে সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা স্টুডিও হলরুমে কথাসাহিত্যিক শামসুন নাহারের রক্তাক্ত মাগুরা প্রেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। অর্জন প্রকাশনের প্রকাশক আবু হাশেম সরকারের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোরের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ আহসান হাবিব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম শামীম আখতার, যশোর কলেজের ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা, রাইজিংবিডি ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক কথাসাহিত্যিক তাপশ রায়, সাংবাদিক কলামিস্ট ও গীতিকার মীর আব্দুল আলীম, লেখক-কলামিস্ট, সাংবাদিক এইচ এম মেহেদী হাসান, মানবাধিকার কর্মী মনিরুল ইসলাম মনির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রক্তাক্ত মাগুরা প্রেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ বইয়ের লেখিকা কথাসাহিত্যিক শামসুন নাহার। বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ-নির্ভর রচনার সংখ্যা খুব বেশি নয়। পাঠকপ্রিয়তার বিচারে এ সংখ্যা আরও কম। কথাসাহিত্যিক শামসুন নাহার এই দুরূহ ক্ষেত্রে বিচরণ করছেন স্বচ্ছন্দে। ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ রচনার ধারায় তিনি লিখেছেন ‘রক্তাক্ত মাগুরা: প্রেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ’।
মুক্তিযুদ্ধ একাত্তর বাংলাদেশের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল অকুতোভয় বাঙালি। মাগুরার অধিবাসীও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দিয়েছিল প্রাণ। শুরুতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাগুরায় ঢুকতে পারে নি। এপ্রিল-এর শেষের দিকে স্বপ্ন গোলাবারুদ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাক-হানাদার বাহিনীর দাপটের কাছে মাথানত করতে বাধ্য হয়।পুস্তকটি একটি গবেষণার ফসল। ২০১৯ সালে লেখক সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করে বইটি লিখেছেন। তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে তিনি গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-মাঠে যেখানেই গণহত্যা, গণকবর বা বধ্যভূমির সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই ছুটেছেন। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলেছেন। স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, ছবি তুলেছেন। তথ্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য বিভিন্ন প্রেক্ষিত তুলে ধরে সঠিক উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। উত্তরদাতার অনুভূতির প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে স্বজন হারানোর ঘটনা জানার চেষ্টা করেছেন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর সেই সময়কার ঘটনা অনেকের মনে আছে, অনেকের নেই। আবার রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে অনেকে হত্যাকারীর নাম বলেন।
নতুন একটি দেশের জন্মলগ্নে লাখো নিরীহ মানুষের শহীদ হওয়ার উপাখ্যান তৈরি হয়, বইটি সেই ইতিহাস তুলে ধরেছে। বইটিতে সাধারণ মানুষের যুদ্ধে অসহনীয় ভয়, শংকা এবং যন্ত্রণার কথা উঠে এসেছে, নতুন প্রজন্ম এই সব ভয়াবহ অত্যাচার নির্মমতার কাহিনি পড়বে, চোখ থেকে অশ্রু ঝরবে, দেশের উন্নতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে তার একটি ছোট্ট প্রয়াস।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মাগুরার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
দীর্ঘ ৯টি মাস পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের হত্যা, নির্যাতনের কালো অধ্যায় পেরিয়ে ১৯৭১-এর ৭ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় মাগুরা। আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মাগুড়ায় প্রথম শহীদ হন শহরের এক পাগল। পাক বাহিনীকে দেখে সে জয় বাংলা বলে উঠলে হানাদাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে। শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জগবন্ধু দত্তকে তার বাড়িতে গুলি করে মারে পাক বাহিনী। এডভোকেট আসাদুজ্জামান এর ভূমিকাও ছিল মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য। হানাদাররা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার হেলেনাকে ধরে এনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। প্রগতিশীল এই নারীকে তারা জিপের পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে সারা মাগুড়া শহর টেনে হিচরে হত্যা করে। সেই সময় সরকারের অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগর থেকে বাংলার ডাক নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে মাগুরার সাংবাদিক দীপক রায় চৌধুরী। পত্রিকাটি ভারতের রানাঘাট মহকুমার একটি প্রেস থেকে ছাপা হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌছে যেত। এভাবে রক্তাক্ত মাগুরা প্রেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ বইটিতে মাগুরার মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথা ইতিহাস লেখিকা তার লিখুনীতে বের করার চেষ্টা করেন।উল্লেখ্য, লেখক ১৯৫৩ সালের ১০ই অক্টোবর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অনগ্রসর পাঁচকাহুনীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সৈয়দ শফি উদ্দিন, মাতা বেগম রোকেয়া। ‘রক্তাক্ত মাগুরা : প্রেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অর্জন প্রকাশন। উৎসর্গ করা হয়েছে লেখকের শ্রদ্ধেয় মা-বাবা, প্রিয় জীবনসঙ্গী এবং তারুণ্যের অগ্রযাত্রায় ছয় কন্যা বীণা, বর্ণা, স্বর্ণা, সারা, অস্পরা ও মুত্তানিক। বইটির মূল্য ধরা হয়েছে পাঁচশত টাকা। এছাড়া ঘরে বসে বইটি কিনতে রকমারি.কম।