ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশে

0
114

ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক-এর অভ্যন্তরে স্থাপনা নির্মাণ গ্যাসের আগুন জালিয়ে রেস্তোরাঁ চালু করার ফলে গাছ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস এবং হাঁটাহাঁটি পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের রেস্তোরাঁ উদ্বোধনের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশে পুলিশের বাধা।

২১ ডিসেম্বর ২০২২ বুধবার সকাল ১১ টায় ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত এবং জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজসহ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ পুরান ঢাকার মানুষের অবসর বিনোদন, অক্সিজেন গ্রহণ ও প্রাতঃভ্রমণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র স্থান ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক-এর অভ্যন্তরে স্থাপনা নির্মাণ, গ্যাসের আগুন জ¦ালিয়ে রেস্তোরাঁ চালু করার ফলে গাছ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস এবং হাঁটাহাঁটি পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের রেস্তোরাঁ উদ্বোধনের প্রতিবাদে এবং এ ধরনের অবিবেচনা প্রসূত, অযৌক্তিক, অপরিণামদর্শী ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বন্ধে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান, সদস্য রক্তিমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বক্তাগণ বলেন, বাহাদুর শাহ পার্ক-এ রেস্তোরার চুলা জ্বালিয়ে প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ, শহীদ বেদির মর্যাদা হানি রক্ষা করতে হবে সকল সচেতন নাগরিককে। এ পার্ক সংলগ্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার জনগণের শরীর চর্চা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের একমাত্র স্থান। এটি শুধু পার্ক নয় ১৮৫৭ সালের ব্রিটিশ বিরোধী সিপাহি জনতার সংগ্রামের শহীদ বেদী। এই পার্ক রক্ষা করা সকল দেশ প্রেমিক জনতার নৈতিক দায়িত্ব। জনস্বার্থ বিরোধী এ সর্বনাশা সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়-এর প্রতি অনুরোধ করেছি। গত ৩১ অক্টোবর ২০২২ স্থানীয় কাউন্সিলরদের (৩৬,৩৭, ৪২, ৪৩ নং ওয়ার্ড) মাধ্যমে মেয়র মহোদয়কে, ৩ নভেম্বর ২০২২ ঢাকা জেলা প্রশাসক, ৫ নভেম্বর ২০২২ ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য, ৮ নভেম্বর ২০২২ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয় ও প্রধান সম্পদ কর্মকর্তার কাছে গণস্বাক্ষরের ফটোকপিসহ স্মারকলিপি পেশ করেছি।

এর ধারাবাহিকতায় ১০ নভেম্বর ২০২২ মেয়র মহোদয়ের আমন্ত্রণে সংগ্রাম পরিষদ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগরের ১৬ জন প্রতিনিধি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করি। প্রতিনিধিবৃন্দের পক্ষ থেকে পার্কের অভ্যন্তরে রেস্তোরাঁ নির্মাণ কাজ বন্ধ, “১৮৫৭ সালের শহীদদের স্মরণে” লেখাটি পুনঃস্থাপন ও পার্কের নিরাপত্তার প্রয়োজনে পার্কের সীমানা বেষ্টনী দেওয়ার দাবি করা হয়। মেয়র মহোদয় আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিসমূহের যৌক্তিকতা স্বীকার করে সেগুলি বাস্তবায়নে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশ^াস দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইজারা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ বেদীর মর্যাদা বিনষ্ট করে স্মৃতিস্তম্ভের সামনেই চুলা জ¦ালিয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে তা বিক্রি শুরু করেছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং পার্কের গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। পার্কে প্রাতঃ ও সান্ধ্য ভ্রমণকারীদের শরীরচর্চার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত এবং জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজসহ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ পুরান ঢাকার মানুষের অবসর বিনোদন, অক্সিজেন গ্রহণ ও প্রাতঃভ্রমণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র স্থান ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক-এর অভ্যন্তরে রেস্তোরাঁ উদ্বোধন করা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

তাই আমরা এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মেয়রের প্রতি কালো পতাকা প্রদর্শন করছি। বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের মর্যাদাহানিকর এবং জনস্বার্থ বিরোধী এ সর্বনাশা প্রকল্প বাতিলের জোর দাবি জানিয়ে বলেন অনতিবিলম্বে বাহাদুর শাহ পার্কের অভ্যন্তর থেকে রেস্তোরাঁ ও তার অবকাঠামো অপসারণ, ইতোমধ্যে স্মৃতিস্তম্ভ থেকে মুছে ফেলা “১৮৫৭ সালের শহীদদের স্মরণে” লেখাটি পুনঃস্থাপন ও নিরাপত্তার স্বার্থে পার্কের চারিপাশে সীমানা বেষ্টনী নির্মাণ করতে হবে। নচেৎ উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য যদি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার দায় কোন ভাবেই সংগ্রাম পরিষদের চাপানো যাবে না। সমাবেশ শেষে একটি কালো পতাকা মিছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আরামবাগ হোটেলের সামনে থেকে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের সড়ক প্রদক্ষিণ করে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে আসলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয় এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে