
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে বিএনপি সন্ত্রাস করার আগাম বার্তা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, গত পরশু মধ্যরাতে মতিঝিলে বিআরটিসির একটা দোতলা বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আগাম জানান দিচ্ছে যে তারা সন্ত্রাস করবে।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এই সম্মেলনে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে মঞ্চ থেকে চলে গেছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।
এ নিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই ছাত্রলীগের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তাঁরা বক্তৃতা করতে পারেননি। তাহলে দাওয়াত দিলেন কেন? একটু একটু করেও বলতে পারল না! মনে নেই আজ শুক্রবার। এ কোনো ছাত্রলীগ, এমন বিস্ময় প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেতারা বক্তৃতা করতে পারলেন না। ভবিষ্যতে সর্তক থাকবেন।’
এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘নানকের মতো, আপনাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, সাবেক মন্ত্রী, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান সময়ের অভাবে বক্তৃতা দিতে পারলেন না। আপনারা মাইক ধরলে ছাড়েন না। পরে কে বলবে খেয়াল থাকে না।
আজকে জুমার দিন খেয়াল থাকে না। এই ছাত্রলীগ আমরা চাই না। সুশৃঙ্খল করুন। সুসংগঠিত করুন। কথা শুনবে না, এই ছাত্রলীগ আমাদের দরকার নেই। অপকর্ম করবে এই ছাত্রলীগ চাই না। দুর্নামের ধারা থেকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই আজকের অঙ্গীকার।’
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের যৌথ বার্ষিক সম্মেলন শুরুর কথা ছিল। তবে অনুষ্ঠান শুরু হয় সোয়া ১১টার দিকে। এর আগে সকাল ৯টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। পরবর্তী কমিটিতে পছন্দের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর নামে স্লোগান তুলে সম্মেলনস্থল মুখর করে রাখেন নেতা-কর্মীরা।
এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও প্রায় সাড়ে চার বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সম্মেলন শেষ হলেও নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, ৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিন অথবা এরও পরে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
প্রতিটি ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার যৌথ বার্ষিক সম্মেলনে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আবারও আগুন-সন্ত্রাস ফিরে আসছে। আমাদের কর্মীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাবে, এটা মনে করবেন না। সারা বাংলায় ঢাকা শহরে নেতারা আছে, বলে দিচ্ছি, নেত্রী বলে দিয়েছেন, পাহারা।
প্রতিটি ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা, সহযোগীদের নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ক্যাম্পাসে সতর্ক পাহারা থাকবে। আওয়ামী লীগে সারা বাংলাদেশে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম সব জায়গায় সতর্ক পাহারা থাকবে।
অনুমতি না দিলে এডামেন্ট থাকবে!
১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নিয়েও ছাত্রলীগের সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি ৩৫ হাজার স্কয়ারফিটের নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের সামনে থাকতে চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এডামেন্ট। অনুমতি না দিলে এডামেন্ট থাকবে! আইন মানবেন না, রাস্তা অবরোধ করে জনগণের ভোগান্তি বাড়িয়ে সমাবেশ কত দিন ধরে করছেন, মনে আছে?’
মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল বলে অঘটন ঘটতে পারে। তাঁরা বলছেন, অঘটন ঘটলে পার্টি অফিসে নিরাপত্তা নিতে পারব। বলেছি পরিবহন চলবে। তারপরও কাঁথা বালিশ, লেপ-তোশক, কম্বল, মশার কয়েল সব নিয়ে এসে পল্টন এলাকায় তাঁবু খাটিয়ে সেই ফখরুলের নেতারা এসে বসেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বলেছি পরিবহন ধর্মঘট হবে না। নেতারা আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। আজকে আমি এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, বিআরটিসির গাড়ি পুড়িয়েছেন। আর যদি আগুন নিয়ে আসেন, সন্ত্রাস করেন, তাহলে জসগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
বিএনপি মাঠে জঙ্গিদের নামিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের মাঠে নামিয়েছেন, সে খবরও আছে। সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে মাঠে নামিয়েছেন। এ খবর কি আমরা জানি না।’
ড. কামাল অর্থ পাচার করেন
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্য পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনিও অবশেষে মুখ খুলেছেন। বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে সরকার নাকি টাকা পাচার করছে। কামাল হোসেন কালো টাকা সাদা করেছেন।
কাদের দাবি করেন, ড. কামাল হোসেন তাঁর ‘ইহুদি জামাইয়ের’ মাধ্যমে কত কোটি টাকা পাচার করেছেন, দেশের মানুষ তা জানতে চায়। এখন তিনি (ড.কামাল) শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে বড় বড় কথা বলেন।