নিম্নতম মজুরী ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে ২৬ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২:০১ মিনিট থেকে নৌশ্রমিকদের কর্মবিরতি।

0
255

রুপসীবাংলা৭১

পিরোজপুর প্রতিনিধি :১৯ নভেম্বর ২০২২ শনিবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে নৌশ্রমিকের নিম্নতম মজুরী ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে সারাদেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঢাকার বাংলা বাজার থেকে এক বিশাল মিছিল গুলিস্তান-পল্টন-বিজয়নগর শ্রম ভবন হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশ করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খলিলুর রহমান ও পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটু। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত নৌশ্রমিক নেতা আবু সাঈদ ড্রাইভার, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের যুগ্ম সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, নৌশ্রমিক নেতা খায়ের উদ্দিন ড্রাইভার, নুর আলম মাস্টার, বাল্কহেড শ্রমিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম, আবদুস সালাম মাস্টার, আইএমই ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর মিয়া, আব্দুর রহমান মাস্টার, হারুন অর রশিদ মাস্টার, নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোঃ আজিজুল হক মাস্টার, যুগ্ম-আহ্বায়ক মোঃ মানিক শরীফ মাস্টার, নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিন্টু, মাহাবুব হক মাস্টার, মাঈনুল ইসলাম মানিক ড্রাইভার প্রমুখ। বক্তারা বলেন নৌযান শ্রমিকরা আজ চরম অর্থনৈতিক দূরাবস্থাসহ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত।

২০১৬ সালে ৫ বছরের জন্য ঘোষিত মজুরী কাঠামোর মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১ বছর ৫ মাস অতিবাহিত হলেও নৌযান শ্রমিকদের নতুন মজুরী কাঠামো ঘোষণার কোন উদ্যোগ আজ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয় নাই। ইতিমধ্যে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র-সার্ভিসবুক প্রদান, কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠনের ২০১৯ সালে সরকার-মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে গৃহীত সিদ্ধান্ত অদ্য পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় নাই। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ভারতীয় সীমানায় ল্যান্ডিংপাসের অভাবে নৌযান শ্রমিকরা বন্দি জীবন-যাপন করছে। এমনকি ল্যান্ডিংপাস না পাওয়ায় চিকিৎসার অভাবে গত ৫ বছরে ২০ জনেরও অধিক নৌশ্রমিকের প্রাণহানী ঘটেছে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাংলাদেশের বন্দর সমূহ থেকে পণ্য পরিবহনের নীতিমালা সম্বলিত গেজেট অমান্য করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের মনিটরিং সেল ডঞঈ কে অকার্যকর করে নৌশিল্পকে ধ্বংসের অশুভ চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বছরের পর বছর দাবি করা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দরে প্রোতাশ্রয়ের ব্যবস্থা না হওয়ায় সী-বিচ এলাকায় অত্যন্ত নিরাপত্তাহীনভাবে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে লাইটারেজ শ্রমিকরা। নৌপথে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী ও ডাকাতি অব্যাহত রয়েছে।

উপরোল্লেখিত সমস্যা সমূহ সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি উত্থাপন করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য আমাদের সকল প্রচেষ্টা বারবার উপেক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে অর্থনৈতিক দূরাবস্থাসহ উপরোল্লেখিত সমস্যা সমূহের কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা এবং নির্বিঘ্নে এই শিল্প চালিয়ে রাখা নৌযান শ্রমিকদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ায় গত সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং মাসে আমরা যখন আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম সেই সময়ে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নৌযান শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে ১০ দফা দাবি নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে সভা আহ্বান করায় আলোচনার টেবিলে আমাদের দাবি পূরণ হবে এই আশায় আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত রেখে আলোচনার ফলাফলের আশায় প্রতিক্ষা করছিলাম। কিন্তু এরপর ২ মাস অতিবাহিত হলেও নৌযান শ্রমিকদের মজুরী নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবির মধ্যে (একমাত্র নৌপরিবহন অধিদপ্তর সংক্রান্ত দাবির বিষয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের সাথে সন্তোষজনক আলোচনা ছাড়া) মজুরী নির্ধারণসহ অন্যান্য দাবিগুলো নিষ্পত্তির কোন অগ্রগতি হয় নাই। গত ১৩ অক্টোবর ২০২২ ইং শ্রম অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় মজুরী নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ২০ অক্টোবর ২০২২ ইং এর মধ্যে সকল পক্ষের নামের তালিকা প্রদান ও কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও অদ্যাবদি সেই কমিটি গঠিত হওয়ার কোন তথ্য আমরা পাই নাই। আমরা লক্ষ্য করছি সরকার ও মালিক পক্ষ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সময় ক্ষেপনের মাধ্যমে নৌযান শ্রমিকদেরকে অধিকার বঞ্চিত করার পায়তারা করছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে শ্রমিকদের জীবনধারন অসম্ভব করে তুলেছে। এমনি অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা ছাড়া নৌযান শ্রমিকদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।

বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে * নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদান। * সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন। * দূর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লক্ষ টাকা নির্ধারণ। * চট্টগ্রাম থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ¦ালানী তৈল সরবরাহের দেশের স্বার্থ বিরোধী অপরিনামদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নের চলমান কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ। * বালিবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রীকালীন চলাচলের উপরে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথীলকরন ও পুলিশী হয়রানী বন্ধ। * নৌ-পথে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ। * ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সকল প্রকার হয়রানী বন্ধ। * চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০% কার্যকর করে সকল লাইটারিং জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, গত ১১ নভেম্বর ২০২২ ইং চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল। * নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সকল ধরনের অনিময়-অব্যবস্থাপনা বন্ধ। * নৌযান শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরী ২০,০০০/- টাকা নির্ধারণ, খাদ্যভাতা ও সমূদ্রভাতার দাবি আদায়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সভাপতি তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন  শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উত্থাপন হওয়ার পর মালিক-সরকার-শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় একটি সভা গত ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে আর কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় উর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিকদের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে বিধায় সকল স্তরের নৌযান শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আগামী ২৬ নভেম্বর ২০২২ শনিবার দিবাগত রাত ১২:০১ মিনিট থেকে ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। তাই দাবি আদায়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করার জন্য সকল নৌযান শ্রমিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে