ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক রক্ষায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)

0
74

১৮৫৭ সালের ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক রক্ষায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) ঢাকা মহানগর কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত
১৮৫৭ সালের ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত বাহাদুর শাহ পার্ক ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে আগামিকাল ১৩ অক্টোবর সকাল ৭ টায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগর কমিটি। মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি জয়নাল আবদীন-এর সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টিটুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ব্রি. জেনা. (অব.) এম জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক, এনডিএফ’র কেন্দ্রীয় কমিটি, এডভোকেট মনসুর হাবীব, সাবেক এডিশনাল এটর্নী জেনারেল, শ্যামল ভৌমিক, সভাপতি, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ, শাহ আলম ভুঁইয়া, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, সভাপতি, প্রকাশ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস্ এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, আখতারুজ্জামান খান, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগর কমিটি, এডভোকেট ইলিয়াস হোসেন, সদস্য, বাহাদুর শাহ পার্ক সংরক্ষণ পরিষদ, ছানাউল্লাহ হক, সভাপতি, বাহাদুর শাহ পার্ক প্রাতঃভ্রমণকারী সংঘ, আনোয়ার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক, বাহাদুর শাহ পার্ক প্রাতঃভ্রমণকারী সমিতি, মকবুলুর রহমান, সদস্য, বাহাদুর শাহ পার্ক প্রাতঃভ্রমণকারী সংঘ, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট আবু ডানিয়েল।
বক্তাগণ বলা হয়, বাহাদুর শাহ পার্ক শুধু পার্ক নয়। এটি ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের রক্তে রঞ্জিত এক ঐতিহাসিক স্থান। ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধের দেশপ্রেমিক বীর সিপাহীদের ধরে এনে তৎকালীন আন্টাঘর ময়দান নামে পরিচিত জায়গায় জনগণকে ভয় দেখানোর জন্য নির্যাতন করে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গাছের উপর ঝুলিয়ে রেখেছিল বর্বর ইংরেজরা। এই ঘটনার ধারাবহিকতায় ১৮৫৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করে। রানীর শাসনভার গ্রহণ করার ঘোষণা এই ময়দানেই (পার্ক) পাঠ করা হয় এবং এই ময়দানের নামকরণ করা হয় ভিক্টোরিয়া পার্ক। পরবর্তিতে ১৯৫৭ সালে ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধের ১০০ বছর পূর্তিতে যেসব বীরদের নৃশংসভাবে যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, সেই বীরদের স্মরণে তৈরি করা হয় স্মৃতি স্তম্ভ এবং এই পার্কের নামকরণ করা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক। সেই ইতিহাসকে সংরক্ষণ না করে এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে গৌরবোজ্জ্বল এই ইতিহাস না ছড়িয়ে ঐতিহাসিক সাহসী বীরদের ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। পার্কের অভ্যন্তরে ফুড ভ্যানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পাঁয়তারা চালাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এই ধরণের অবিবেচনা প্রসূত, অযৌক্তিক, অপরিনামদর্শি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বন্ধের দাবিতে এবং যেকোন ধরণের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে মাসাধিকালব্যাপী এনডিএফ, বাহাদুর শাহ পার্ক সংরক্ষণ পরিষদ, বাহাদুর শাহ পার্ক প্রাতঃভ্রমণকারী সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন ও এলাকাবাসীর অব্যাহত প্রতিবাদ সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশন জনমতকে উপেক্ষা করে তাদের খামখেয়ালী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনড় রয়েছেন। যাহা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা মনে করি বাহাদুর শাহ পার্কের অভ্যন্তরে এই ধরণের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের কোন যৌক্তিকতা নাই। এই ধরণের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মিত হলে এই ঐতিহাসিক স্থানের শুধুমাত্র মর্যাদাই ক্ষুন্ন হবে না, একইসাথে অত্র এলাকার স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীর অবসর বিনোদন, অক্সিজেন গ্রহণ ও শরীর চর্চার একমাত্র স্থানটি বেদখল হয়ে যাবে। যা কোন বিবেকবান মানুষই মেনে নিতে পারে না। নেতৃবৃন্দ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়-এর প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেন নগর পিতার মতো মানুষের সামান্য অর্থের বিনিময়ে (সূত্র মতে বাৎসরিক প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা) অথবা কোন ধরণের স্বজনপ্রীতির দোষে দুষ্ট হয়ে জনস্বার্থ বিরোধী এই সর্বনাশা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গণশত্রুতে পরিণত হওয়া সাধারণ মানুষ কোন ভাবেই মেনে পারছে না। তাই আগামী ৭ দিনের মধ্যে পার্কের অভ্যন্তরে ফুড ভ্যানসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য যে লোহা ও কনক্রিটের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে তা তুলে নিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে পার্কে শরীর চর্চা সহ অবসর বিনোদন গ্রহণ করতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্মৃতিস্তম্ভের গাঁয়ে “১৮৫৭ সালের শহীদদের স্মরণে” লেখাটি দৃশ্যায়িত করে পূর্ণলিখন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস জানানোর স্বার্থে বাহাদুর শাহ পার্কের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সিটি করপোরেশন কর্তৃক জনসম্মুখে দৃশ্যমান জায়গায় টানাতে হবে। নগর জীবনের সাথে সম্পর্কিত দখলকৃত সকল পার্ক, পুকুর, খাল, বিল ও নদী দখলমুক্ত করে নগরবাসীর জন্য ব্যবহার উপযোগী করা এবং কোনরকম ফি ছাড়াই উন্মুক্ত রাখতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে