নিজস্ব প্রতিনিধিঃ-আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, দূষণমুক্ত ঢাকা নগরী বিনির্মাণে ইউএসএআইডি এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের কারিগরী সহযোগিতায় প্রমোটিং এ্যাডভোকেসি এন্ড রাইটস্ধসঢ়; (পার) কর্মসূচির আওতায় ঢাকা কলিং প্রকল্পটি ডিএসকে’র নেতৃত্বে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) ও ইনসাইটস এর সমন্বয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ০৬ ও ১৯ নং ওয়ার্ডে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৪ ও ৫৫ নং ওয়ার্ডে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি গণতান্ত্রিক শাসন ও নাগরিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে নাগরিক সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্বশীল করার জন্য কাজ করছে। এর ফলে স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যগত প্রভাব’ শীর্ষক আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য: ১. কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগর প্রান্তিক জনগোষ্ঠির বর্জ্য সেবা অধিকার এবং ‘নগরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যের উপর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রভাব’ শীর্ষক স্টাডি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে চিহ্নিত সমস্যা সমাধান করা যায় ও বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়। ২. পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কল্পে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন আইনসমূহের চিহ্নিত গ্যাপ ও এর বাস্তবায়নে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা। প্রাপ্ত গবেষণার ফলাফল: ০৭ অক্টোবর ২০১৯ সালে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত নিবন্ধ অনুযায়ী বাংলাদেশের শহরগুলোতে প্রতিদিনগড়ে প্রায় ২৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয় যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বর্জ্য শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই উৎপাদিত হয়। ১ প্রতিদিন উৎপাদিত এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যরে একটি বৃহত্তর অংশই আবার থেকে যাচ্ছে অসংগৃহীত যা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে নগরের আশেপাশের রাস্তা, খাল, বিল, জলাধার, নি¤œাঞ্চল ইত্যাদিজায়গায়। বিক্ষিপ্তভাবে নিক্ষিপ্ত ও অসংগৃহীত এ সকল কঠিন বর্জ্য সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে নিষ্কাশন বা পুনর্ব্যবহারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নেয়ায় নগরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে যা আমাদের পরিবেশগত সাংবিধানিক অধিকারকেও (সংবিধানের ১৮-ক অনুচ্ছেদ) ক্ষুন্ন করছে।
বর্জ্যরে এ সকল অব্যবস্থাপনার নেতিবাচক প্রভাব ও ক্ষতির সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে নগরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠিরা যাদের আবাস মূলত আমাদের নগরের বস্তি এলাকাগুলোতে।কঠিন বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১ গেজেট আকারে পাশ করেছে। আমরা প্রকল্পের পক্ষ থেকে সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এই বিধিমালা প্রণয়ন সরকারের পক্ষ থেকে একটি চমৎকার উদ্যোগ হলেও এই বিধিমালা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয়াবলীকে অন্তর্ভূক্ত করতে পারেনি এবং এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি অনুপস্থিত। কঠিন বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট পরিবেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, চর্মরোগ, ইউরিন ইনফেকশন, প্র¯্রাবে জ্বালাপোড়াসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যান্সার, জন্ডিস, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড রোগের মত বিপজ্জনক রোগের বিষয়টিও গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ধরণের রোগ সাধারণত অবিশুদ্ধ ও অনিরাপদ পানি খাওয়া, অনেকক্ষণ ময়লার মধ্যে থাকা ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। প্রায় ৩৪ শতাংশ মানুষ নোংরা পরিবেশের কারণে এ ধরণের রোগে আক্রান্ত হন। ২৭ শতাংশ মানুষ ময়লা পানির জন্য এবং ১৯ শতাংশ জলাবদ্ধতার কারণে এ ধরণের রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে গবেষণায় তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
আবার, অন্য এক সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামের মানুষের তুলনায় শহরের বস্তিবাসীদের শিশুমৃত্যুর হার বেশি। যেখানে বস্তিতে প্রতি হাজারে ৫৭ শিশুর মৃত্যু হয়, সেখানে গ্রামে হাজারে মারা যায় ৪৯ জন। ২ এসব রোগ-শোকে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। পরিবারে তাদেরকে বোঝা বলে মনে করা হয়। ফলে অনেকেই তাদের ভিক্ষাবৃত্তির সাথে যুক্ত করে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে প্রান্তিক নাগরিকরা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যেই থাকেন না, বরং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উপরও পড়ে নেতিবাচক প্রভাব। আবার সুচিকিৎসার অভাব তাদের স্বাস্থ্যগত নানারকম জটিলতা তৈরি করে। এগুলো তাদের মানসিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। আজকের সংবাদ সম্মেলনে আমরা কঠিন বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা কিভাবে নগরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে এবং এর মাধ্যমে কিভাবে আমরা এই বিধিমালাসহ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে একটি টেকসই পদ্ধতির দিকে নিয়ে যেতে পারি সে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।