চট্টগ্রামে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণে শ্রমিক ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ৪৯ জন

0
95

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণে শ্রমিক ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ৪৯ নিহত এবং প্রায় দুই শতাধিক আহতের ঘটনায় শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম-এসএনএফ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। নিমতলি চুরিহাট্টাসহ বারবার এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্ত পরিদর্শন কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাই প্রমান করে। একইসাথে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত শনিবার (৪ জুন ২০২২) রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস ও ডিপোর কর্মীরা কাজ করার সময় রাসায়নিক থাকা একটি কনটেইনার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় এবং সারা রাত থেমে থেমে বিস্ফোরিত হতে থাকে। এ ঘটনায় আটকে পড়া প্রায় তিন শতাধিক মানুষ আহত হন এবং পরে শ্রমিক ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জানা গেছে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য মজুত রয়েছে, যা একটি রাসায়নিক যৌগ এবং উত্তপ্ত হলে এটি তাপীয় বিয়োজনে বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে।উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় রাসায়নিকের গুদামে লাগা আগুনে ১২৪ জন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরিণ অগ্নিকান্ডে ১১২ জন, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ আগুনে ৭১ জন এবং ২০২১ সালের ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকান্ডে ৫১ জন প্রাণ হারায় এবং ৩৪ জন আহত হন। এছাড়া গাজীপরের টাম্পাকো, ঢাকার শ্যামপুরের আলম গার্মেন্টস, সোয়ারীঘাটের রোমা রাবার (জুতার কারখানা) সহ বিভিন্ন কারখানা/প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডের ঘটনাও সকলের জানা। প্রকৃত দায়ী ও দোষী ব্যক্তিদেরকে যথাযথ শাস্তি না দিয়ে বিচারহীনতার চর্চা এবং পরিদর্শন কর্তৃপক্ষের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা এ সকল ঘটনার পুনরাবৃত্তির মূল কারণ বলেই প্রতীয়মান হয়।    

শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম উপরোক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, নিহত ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান, এবং আহতদের সুচিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিহত শ্রমিকদের সনাক্ত, হতাহত শ্রমিকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানদন্ড (লস অফ ইয়ার আর্নিং) অনুসরণ করে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবী জানাচ্ছে। এছাড়া বিস্ফোরক আইনসহ অন্যান্য আইনের সংস্কার ও যথাযথ বাস্তবায়ন, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।ফোরাম লক্ষ্য করছে যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা, অবহেলা, উদাসীনতার কারণে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে