বর্তমান জাতীয় সংকট এবং সমাধানে নাগরিক ভাবনা সেমিনার 

0
87

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ অদ্য ১১:০০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে, নাগরিক সমাজ এর উদ্যোগে, *বর্তমান জাতীয় সংকট এবং সমাধানে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার* অনুষ্ঠিত হয়েছে।সেমিনারের সভাপতিত্ব করছেন *ডঃ কামাল হোসেন* সভাপতি, গণফোরাম।উপস্থিত আছেন *মোকাব্বির হোসেন খান এমপি* সিলেট ৫।অধ্যাপক আসিফ নজরুল* আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান* পরিবেশবিদ।প্রমূখ সহ ৮০/৯০ জন নেতাকর্মী ও সদস্য উক্ত সেমিনারে উপস্থিত দেশ আজ সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে আজ ভগ্নদশা। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রে অস্থিরতা। স্বাধীন ভাবে রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার ভোটের অধিকার, বিচারহীনতা, জান-মালের নিরাপত্তার অধিকার সহ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সমূহ প্রতিনিয়ত লংঘিত হচ্ছে। শাসক গোষ্ঠীর সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দ্রব্য মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গুম-খুন-ধর্ষণ, পুলিশি নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, প্রশাসনের নির্লজ্জ দলীয়করণের কারণে রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকগণ

ভয়াবহ করোনা সংকটে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ যখন ক্রমাগত দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে তখন বিশেষ বিশেষ দূর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির ব্যবসায়িক লাভের কারণে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপকৌশলে বেড়ে চলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেরমূল্য। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই দফায় দফায় বেড়ে চলেছে ডিজেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম। চাল, ডাল, চিনি ভোজ্য ভেলসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। মানুষ অনোন্যপায় হয়ে তার স্বাভাবিক জীবন-যাত্রাকে সংকুচিত করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেই চাকুরি হারিয়ে বেকার হচ্ছে। সঠিক বৈদেশিক নীতির অভাব ও দুর্নীতির কারণে আমাদের শ্রমবাজার ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে রেমিটেন্সের প্রবাহ। অথচ সরকার এ ব্যাপারে নির্বিকার। কেবলমাত্র রাষ্ট্রক্ষমতা আকড়ে থাকার অপকৌশল গ্রহণ ছাড়া সরকার আর কিছুতেই আগ্রহী নয়।রাজনীতিতে আজকে যে সংকট চলছে তা হচ্ছে গণতন্ত্রের সংকট। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে কর্তৃত্ববাদ, ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং নির্লজ্জ দলীয়করণ। প্রতিটি নির্বাচন আজ রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কাছেই গুরুত্বহীন। এর ফলে শুধুমাত্র গণতন্ত্র, সংসদীয় পদ্ধতি ও নির্বাচন ব্যবস্থাই ভেঙ্গে পড়েনি, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আজ হুমকির সম্মুখীন। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ গণতন্ত্রহীন, মানবাধিকারহীন, আত্মমর্যাদাহীন, দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। নির্বাচন যখন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়না তখন গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকেনা এবং জনগণের ক্ষমতা রহিত হয়ে যায়, যা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার পরিপন্থি। জাতির জনক মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর জনগণের কর্তৃত্ব নিশ্চিত হয় সেই লক্ষ্যে দেশের মানুষকে একটি শ্রেষ্ঠ সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, এবং দেশের জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক সেটা ও আমাদের এই মহান সংবিধানে নিশ্চিত হয়েছে। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারের ভিত্তিতে ৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সেই সংবিধান আজ বহুলাংশে উপেক্ষিত। আজ দেশের সেই মালিকগণ তাদের মালিকানা হারিয়েছেন।

জনগণের দাবি যখন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা, তখন সরকার দেশের জাতির বিবেককে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তড়িঘড়ি করে আইন প্রণয়ন করেছে একটি সার্চ কমিটি গঠনের জন্য, যা নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন বলে প্রচার করা জাতির সাথে তামাশা ও এক মহাপ্রহসন মাত্র।১। বাংলাদেশের জনগণ কর্তৃত্ববাদী অগণতান্ত্রিক শাসনের অবসান চায়। তাদের মালিকানা পুণঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রকামী ১৭ কোটি মানুষের আজকে প্রাণের দাবি একটি শক্তিশালী স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে ভোটারবিহীন নির্বাচন ও আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি নির্বাচনের নামে প্রহসনের পরিবর্তে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। যার মাধ্যমে নাগরিকরা ফিরে পেতে চায় তাদের হারানো ভোটাধিকার। রাষ্ট্র ফিরে পেতে চায় তার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য।২। জনগণ চায় নির্বাচন কমিশনের উপরে কোন ভাবেই যাতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বা সরকার কোনরূপ প্রভাববিস্তার করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দল বা সরকার নির্বাচন কমিশনের উপর এমন ভাবে অবৈধ চাপ প্রয়োগ করে যাতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কিছুতেই স্বাধীন ভাবে কাজ করা সম্ভব হয়না। এ কারণেই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণ যোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে জনগণ চায় একটি নিরপেক্ষ সরকার। নির্বাচন কমিশনের উপর যেন কোন ভাবেই নির্বাচনকালীন সরকার কোন প্রকার অবৈধ চাপ প্রয়োগ করতে না পারে, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেনা। তাতে নির্বাচন কমিশন নতজানু মানসিকতা ও সরকারের আজ্ঞাবহতা পরিত্যাগ করে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে।৩। রমজান মাস অত্যন্ত নিকটবর্তী, প্রত্যেকটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষের জীবন আরো দুর্বিসহ থেকে দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। তাই এক্ষুণই বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকরা একান্ত আবশ্যক।৪। দেশের বিবেকবান নাগরিকগণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অরাজক পরিস্থিতির নিরসন চায়। চায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। দূর করা হোক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা, লুটতরাজ, নির্লজ্জ দলীয়করণ নিশ্চিত করা হোক একটি আর্ন্তজাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থাস্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশ বর্তমানে মহা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আজকে এখানে যাঁরা আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন তাঁদের মূল্যবান পরামর্শে জাতি অনেক ক্রান্তিলগ্ন থেকে উত্তরণ লাভ করেছে। আমরা গভীর ভাবে প্রত্যাশা করি আজকের আলোচনায় তাঁদের নিকট থেকে এমন কিছুদিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ বের হয়ে আসবে যেগুলো সরকার গ্রহণ করলে জাতি এই ক্রান্তিকাল সফল ভাবে অতিক্রম করতে পারবে।দেশের সকল নাগরিকের প্রত্যাশাপূরণ হোক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে